টার্কির বাচ্চাকে কৃত্রিমভাবে তাপ দিয়ে লালন পালন করাকে ব্রুডিং বলে। সাধারণত ৬-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত টার্কির বাচ্চাকে ব্রুডিং করা হয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার পর তারা তাদের দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, কারণ তার শরীরে পর্যাপ্ত পালক থাকে না ।
উৎপাদিত বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট, বাচ্চার দেহের এই তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা গড়ে না ওঠা পর্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রতিপালন করতে হয়। তাই পীড়নের হাত থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করার জন্যই ব্রুডিং করা হয়। যে যন্ত্রের সাহায্যে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চাকে তাপ দেওয়া হয় তাকে ব্রুডার বলে। ৭ ফুট থেকে ৮ ফুট ব্যাসের একটি চিকগার্ডের ভেতর ৩০০-৪০০টি বাচ্চা প্রাথমিকভাবে ব্রুডিং করা যাবে।
ব্রুডিং এর সুফল
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।
২. বিভিন্ন পীড়ন থেকে সুরক্ষিত থাকে।
৩. সমস্ত বাচ্চা সমানভাবে বেড়ে উঠে
৪. শারীরিক গঠন সঠিক ভাবে হয় ।
৫. বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
৬. ঠান্ডা, গরম, বৃষ্টি, প্রতিকূল আবহাওয়া ইত্যাদি থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করা যায় ।
ব্রুডিংকালীন সময়ে ব্রুডারে তাপের উৎস হিসেবে বিভিন্ন ধরনের জ্বালানি ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যেমন-
১. বিদ্যুৎ : বৈদ্যুতিক বাল্ব বা হিটার ।
২. কেরোসিন : কেরোসিন হিটার ।
৩. গ্যাস : গ্যাস হিটার ।
ব্রুডার হাইজে প্রথম সপ্তাহে সাধারণত ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা দিয়ে ব্রুডিং আরম্ভ করা হয় এবং পর্যায়ক্রমে তা কমিয়ে আনা হয়।
ব্রুডিং তাপমাত্রা
উপরে যে তাপমাত্রা উল্লেখ করা হয়েছে তা ব্রুডারের তাপমাত্রা। হোভার ও চিক গার্ডের মাঝখানে মেঝে থেকে প্রায় ৬ ইঞ্চি উঁচুতে থার্মোমিটার ঝুলিয়ে এই তাপমাত্রা নিরূপণ করা হয়।
থার্মোমিটার ঘড়াও ব্রুডারের তাপ সঠিক হয়েছে কিনা তা ব্রুডারে বাচ্চার অবস্থান এবং চলাফেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝা যায় ।
ক) কাম্য তাপমাত্রা
যে তাপমাত্রায় বাচ্চাগুলো আরাম বোধ করে ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করে তাই কাম্য তাপমাত্রা।
কাম্য তাপমাত্রার লক্ষণ :
বাচ্চা চিকগার্ডের মধ্যে সর্বত্র সমভাবে বিস্তৃতি থাকবে ও চলাফেরা করবে। খাদ্য ও পানি গ্রহণের স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যাবে। বাচ্চাগুলোর চলাফেরায় চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হবে।
খ) অতিরিক্ত ঠান্ডা :
যদি ব্রুডারে তাপমাত্রা কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় কম হয় তখন বাচ্চাগুলো ঠান্ডা অনুভব করে।
কম তাপমাত্রার লক্ষণ :
ব্রুডারের নিচে তাপের উৎসের কাছে সমস্ত বাচ্চা জড়ো হয়ে থাকবে। চি চি শব্দ করে ঘাড় ছোট করে গুটি সুটি মেরে থাকে। একটির উপর আরেকটি বাচ্চা উঠার প্রবণতা দেখা যায় অর্থাৎ গাদাগাদি করে থাকে। খাদ্য ও পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়।
প্রতিকার :
ব্রুডার পর্যাপ্ত তাপ উৎপাদনে সক্ষম কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পরিমান তাপ উৎপাদনে সক্ষম ব্রুডার ব্যবহার করতে হবে। অতিরিক্ত ব্রুডারের তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা করা এবং ঠান্ডা বাতাস যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
গ) অতিরিক্ত গরম
ব্রুডারের কাম্য তাপমাত্রার তুলনায় অধিক তাপমাত্রা থাকলে বাচ্চাগুলো অধিক গরম অনুভব করে।
অতিরিক্ত তাপমাত্রার লক্ষণ: বাচ্চা গুলো তাপের উৎস হতে দুরে সরে গিয়ে চিকগার্ডের কাছাকাছি অবস্থান করে। মুখ হাঁ করে শ্বাস নিতে থাকে। খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা কমে যায় ।
প্রতিকার :
তাপের উৎসের সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে। ঘর ঠান্ডা করার জন্য বেড়া দেয়া পর্দা তুলে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, ব্রুডার ঘরে অতিরক্তি ঠান্ডা যেমন ক্ষতিকর তেমনিই অতিরিক্ত গরমও বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। উভয় ক্ষেত্রেই বাচ্চার দেহে পীড়ণ পড়ে ও বাচ্চা সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কাজেই ব্রুডার ঘরের কাম্য তাপমাত্রা সব সময় বজায় রাখতে হবে।
আরও দেখুন...